যারা কাওয়ালী বুঝেন না

ছবি: কাওয়ালী পরিবেশনার চিত্র।

কাওয়ালী (Qawwali) হলো সুফি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগীতধারা, যা দক্ষিণ এশিয়ার সুফি সাধক ও অনুসারীদের মধ্যে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এটি মূলত ধর্মীয় সংগীত, যার মাধ্যমে আল্লাহর প্রশংসা, পয়গম্বরদের মহত্ব এবং সুফি সাধকদের মহানুভবতা বর্ণনা করা হয়। 


কাওয়ালীর ইতিহাস:

কাওয়ালীর উৎপত্তি পারস্যে, তবে এটি ভারতীয় উপমহাদেশে বিশেষভাবে বিকশিত হয়। ১৩শ শতাব্দীর সুফি সাধক আমির খসরু কাওয়ালীর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি হিন্দুস্তানী শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও পারসিক সঙ্গীতের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে কাওয়ালীর ধারা তৈরি করেন।


কাওয়ালীর কাঠামো:

কাওয়ালী মূলত গোষ্ঠীগান, যা সাধারণত একটি দল দ্বারা পরিবেশিত হয়। দলটির প্রধান শিল্পীকে বলা হয় "কাওয়াল," আর অন্যান্য সদস্যরা হারমোনিয়াম, তবলা, ঢোলক, এবং হাততালির মাধ্যমে তাকে সঙ্গ দেয়। 


আলাপ: কাওয়ালীর শুরুতে এক ধরনের আলাপ বা প্রার্থনা থাকে, যা বেশ শান্ত ও ধীর লয়ে পরিবেশিত হয়।

- **আসার (Chorus)**: প্রধান কাওয়াল যখন গান শুরু করে, দলের বাকিরা তাকে সমর্থন করে করতালির মাধ্যমে।

আন্তরিকতা: এই গানের মূল ভাব হলো একনিষ্ঠ ভক্তি এবং আল্লাহর প্রতি প্রেম। সুফি কাওয়ালীরা এই সংগীতের মাধ্যমে একধরনের আধ্যাত্মিক উন্মাদনা সৃষ্টি করেন


কাওয়ালীর গানে সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয়গুলি থাকে:

- আল্লাহর প্রশংসা

- হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এবং অন্যান্য পয়গম্বরদের প্রশংসা

- সুফি সাধকদের জীবনী

- প্রেম, ভক্তি, এবং আত্মার পরিশুদ্ধি

 কাওয়ালীর জনপ্রিয়তা:

কাওয়ালী পাকিস্তান, ভারত, এবং বাংলাদেশের মতো দেশে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। নুসরাত ফতেহ আলি খান, আজিজ মিয়াঁ কাওয়াল এবং সাবরি ব্রাদার্স কাওয়ালীর ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছেন।


কাওয়ালী শুধু ধর্মীয় সংগীত হিসেবে সীমাবদ্ধ নয়, এটি বর্তমানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এবং জনপ্রিয় বিনোদনের মাধ্যমেও শোনা যায়।

Post a Comment

0 Comments